ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ২৮ অগাস্ট ২০২৫ , ১২ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
হিজাব বিতর্কে শিক্ষক বরখাস্ত উত্তাল ভিকারুননিসা আজ জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ মোট ভোটার ১২ কোটি ৬১ লাখ ডাকসু নির্বাচনে প্রচারণায় উৎসবমুখর ঢাবি ক্যাম্পাস প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের উপর সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ গাজীপুরে বিএনপি নেতার বাড়িতে ডাকাতি জেনেভা ক্যাম্পে সেনা অভিযানে গ্রেফতার ১১ গোবিন্দগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২ ভূমিদস্যু ও জালিয়াতি সম্রাট আসলামের অবৈধ কর্মকাণ্ডে গোপন তদন্ত শুরু ভারতে কারাভোগ শেষে দেশে ফিরলেন ১৭ বাংলাদেশি প্রধান আসামির মৃত্যুদণ্ড সহযোগীর পাঁচ বছর কারাদণ্ড জটিল রোগে ৩ লাখ টাকা পাবেন সরকারি কর্মচারীরা আবু সাঈদ হত্যা মামলায় ট্রাইব্যুনালের বিচার শুরু কর্মস্থলে শ্রমিকের মৃত্যু কমছে না আমতলীতে যুবদল নেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যে ও ভিত্তিহীন বানোয়াট সংবাদ প্রকাশে নিন্দা জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন যুবদল নেতা আমতলীতে প্রতিবন্ধীর জমি দখলের পায়তারা,সালিশ বৈঠকে বসে মারামারির অভিযোগ উঠেছে ফরিদপুরে আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত নিয়মিত মাসোহারা নিচ্ছে পুলিশ ভিকারুননিসায় হিজাবকাণ্ড অভিযুক্ত সেই শিক্ষিকা বরখাস্ত প্রণোদনার বীজ আমদানিতে অমিত-বঙ্গ সিন্ডিকেট বহাল ৩০৯ আবেদনের নিষ্পত্তি

ডাকসু নির্বাচনে প্রচারণায় উৎসবমুখর ঢাবি ক্যাম্পাস

  • আপলোড সময় : ২৮-০৮-২০২৫ ১২:০৫:৩৬ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ২৮-০৮-২০২৫ ১২:০৫:৩৬ পূর্বাহ্ন
ডাকসু নির্বাচনে প্রচারণায় উৎসবমুখর ঢাবি ক্যাম্পাস
* শিবিরের প্রচারণায় বাধার অভিযোগ
* ডাকসু প্রার্থীদের প্রচারণার বিষয়ে অতিজরুরি নির্দেশনা
* ভিপি পদপ্রার্থী জ্বালাময়ী জালাল নিজের রুমমেটকে ছুরিকাঘাতে হত্যাচেষ্টার ঘটনা নির্বাচনের উপর কোনো প্রভাব পড়বে না  অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদ, প্রক্টর-ঢাবি

ডাকসু নির্বাচনে প্রচার-প্রচারণায় সরব প্রার্থীরা। সমানতালে জনসংযোগ করছেন ছাত্র সংগঠন সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। হাতে হাতে লিফলেট বিলি করে, ভোটারের সাথে কুশল বিনিময় করে প্রচারণা চালাচ্ছেন প্রার্থীরা। প্রার্থীর প্রতিশ্রুতিতে প্রচারণায় উৎসব নেমে এসেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্পাসে। গতকাল বুধবার ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের প্রচারণার ২য় দিন এমন চিত্র চোখে পড়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায়। তবে ভিপি পদপ্রার্থী জ্বালাময়ী জালাল নিজের রুমমেটকে ছুরিকাঘাতে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় এখনো উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে ঢাবি ক্যাস্পাসজুড়ে। এ ঘটনার পর জন্ম দিয়েছে নানা আলোচনা-সমালোচনা।
যদিও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন পর কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন ঘিরে ক্যাম্পাসে অনেক বাধা-বিপত্তি ও রাজনৈতিক উত্তাপ বিরাজ করছে। তারপরও আশা করা হচ্ছে, নির্বাচনটি হবে ভয়হীন, শান্তিপূর্ণ এবং অংশগ্রহণমূলক। যদিও প্রথম দিনের প্রচারণায় ইসলামী ছাত্রশিবিরকে বাধার মুখে পড়তে হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। শিক্ষার্থীরা বলছেন, একটি আলোচিত ছাত্র সংগঠনের প্যানেলের ফেস্টুন যদি দিনে-দুপুরে এভাবে ভেঙে ফেলা হয়, তবে অন্য সংগঠনগুলোর নিরাপত্তা কীভাবে নিশ্চিত হবে। এসব দেখেও যদি প্রশাসন এমন নির্বিকার থাকে, তবে তারা কীভাবে আমাদের একটি সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দেবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন ২০২৫ নিয়ে অতিজরুরি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যেসব প্রার্থী ব্যানার বা ফেস্টুন বা বোর্ড টাঙিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন, তাদের দ্রুত সময়ের মধ্যে সব অপসারণের নির্দেশনা দিয়েছেন রিটার্নিং অফিসার। গতকাল বুধবার ডাকসু আচরণবিধি সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের রিটার্নিং অফিসার ও আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. গোলাম রব্বানী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সবার অবগতির জন্য আচরণবিধির ধারা-৭(ক) অনুযায়ী নির্বাচনী প্রচারণার জন্য শুধু সাদা-কালো পোস্টার, লিফলেট বা হ্যান্ডবিল ছাপানো ও বিলি করা যাবে। পিভিসি বা কাপড় বা অন্য কোনো মাধ্যমে ছাপানো বা লেখা ব্যানার বা ফেস্টুন বা বোর্ড টাঙানো যাবে না। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, যেসব প্রার্থী ইতোমধ্যে ব্যানার বা ফেস্টুন বা বোর্ড টাঙিয়ে প্রচার চালাচ্ছে, তাদের আজ (বুধবার) বিকেল ৩টার মধ্যে তা সরিয়ে নেওয়ার জন্য। সবাইকে আচরণবিধি মেনে প্রচার-প্রচারণা চালানোর নির্দেশনা দিয়েছে টাস্কফোর্স।
সরেজমিনে দেখা যায়, গতকাল বুধবার সকালে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে লিফলেট হাতে সানজিদা আহমেদ তন্বিকে। যিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আইকনিক চরিত্র হিসেবে বেশ পরিচিত। স্বতন্ত্রভাবে দাঁড়িয়েছেন ডাকসুর গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে। ডাকসুর গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক পদপ্রার্থী সানজিদা আহমেদ তন্বি বলেন, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আশার অতীত সাড়া পাচ্ছি। অনেকেই আমাকে দেখে চিনতে পারছেন। তারা আগ্রহ দেখাচ্ছে যে আমি এ লাইনটাতে কাজ করছি। সবকিছু মিলিয়ে ভালো লাগছে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এত সাড়া পাব আমি ভাবিনি। এদিন, অন্যান্য স্বতন্ত্র প্রার্থীদেরও চোখে পড়ে প্রচারণা চালাতে। তারাও দিচ্ছেন নানান প্রতিশ্রুতি। ডাকসুর এজিএস প্রার্থী তাহমীদ আল মুদ্দাসসির চৌধুরী বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আমি যেটা দেখতে পাচ্ছি শিক্ষার্থীদের মধ্যে রাজনৈতিক প্যানেলগুলো নিয়ে তারা অনেকেই সন্দিহান। আমার কাছে মনে হয়েছে সে প্যানেলগুলো বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। শিক্ষার্থীরা প্যানেলগুলোর ওপর ভরসা রাখতে পারছে না। হল সংসদের প্রার্থীরাও হলে হলে প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। হল সংসদের প্রার্থীরা জানান, তারাও পিছিয়ে নেই। তারাও নিয়মিত শিক্ষার্থীদের কাছে যাচ্ছেন, প্রচারণা চালাচ্ছেন। প্রার্থীদের নির্বাচনী ইশতেহার শিক্ষার্থীদের ঠিকমতো বুঝাতে পারলে ভোটাররা আশ্বস্ত হয় বলেও জানান হল সংসদের প্রার্থীরা। এদিন দুপুরে প্রচারণায় দেখা যায় ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীদের। এ সময় ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান জানান, ৯০ এর পুনরাবৃত্তি হতে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের ব্যাপক সাড়া পাওয়ার কথাও জানান আবিদ। ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান বলেন, যথেষ্ট উচ্ছ্বাস দেখতে পাচ্ছি শিক্ষার্থীদের মধ্যে। এখন পর্যন্ত যে কয়দিন প্রচারণা চালিয়েছি আমরা ভোটাররা অনেক বেশি উচ্ছ্বসিত আমাদের নিয়ে। সম্ভবত নব্বই এর পুনরাবৃত্তি হতে যাচ্ছে। তবে ছাত্র অধিকার পরিষদের ‘ডাকসু ফর চেঞ্জ’ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী বিন ইয়ামিন মোল্লা প্রশাসন প্রভাবিত, পক্ষপাতিত্ব আচরণ করছে বলে অভিযোগ করেন। ডাকসুর মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে বলে জানান তিনি। ভিপি প্রার্থী বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, ২৪ ঘণ্টা হয়ে গেছে এখনো ব্যানার ফেস্টুনগুলো ঝুলছে। অথচ আমাদের বলা হয়েছে এগুলো নিয়মের মধ্যে নেই। তবে চিফ রিটার্নিং কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন বলেন, এরপরেও যাতে একটা মডেল সেট হয় ডাকসুতে। আমরা দীর্ঘদিন গণতন্ত্র বঞ্চিত। আমাদের শিক্ষার্থীরা ভোট দিতে পারে না, বাংলাদেশের জনগণ ভোট দিতে পারেনি। অন্তত ডাকসুর মাধ্যমে বাংলাদেশে ভোটের চর্চা শুরু হোক। আমরা আশা করি আমাদের শিক্ষার্থীরা সে মডেলটা সেট করবে বাংলাদেশের জন্য। আগামী ৯ সেপ্টেম্বর নির্বাচনকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থীরা। অন্যদিকে গত মঙ্গলবার দিনগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে স্বতন্ত্র প্যানেলের সহসভাপতি (ভিপি) পদপ্রার্থী জালাল আহমেদ ওরফে জ্বালাময়ী জালাল নিজের রুমমেটকে ছুরিকাঘাতে হত্যাচেষ্টা করেন। এরপরই তাকে হল থেকে বহিষ্কার এবং পুলিশে সোপর্দ করা হয়। বর্তমানে তিনি কারাগারে। অন্যদিকে আহত শিক্ষার্থীকে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা জালালের উপর এবং তাকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. সিরাজুল ইসলামের পদত্যাগ দাবি করেন। সবমিলিয়ে এখনো উত্তেজনাকর পরিস্থিতি ঢাবি ক্যাস্পাসজুড়ে। জালালের ওই ঘটনার পরে রাতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদ সংবাদিকদের বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে এরকম উত্তেজনাকর পরিস্থিতি আগেও হয়েছে। এতে ডাকসু নির্বাচনের উপর কোনো প্রভাব পড়বে না। নির্বাচন নির্ধারিত সময়ে সুষ্ঠুভাবেই সম্পন্ন হবে। ডাকসুর ভোট নির্বিঘ্ন করতে ক্যাম্পাসের ভোট কেন্দ্রগুলোতে সেনাবাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এ বিষয়ে সবার মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। ডাকসুর সাবেক ভিপি, জিএস এবং বর্তমান বিভিন্ন প্যানেলের প্রার্থীরাও বিষয়টি ভালোভাবে নেননি। ডাকসুর সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুশতাক হোসেন এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করার দায়িত্ব প্রশাসনের। অতীতে সেনাবাহিনী ছাড়াই ডাকসু নির্বাচন হয়েছে। এবারও সেনা মোতায়েনের মতো কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। সেনা উপস্থিতি বরং অস্থিরতা বাড়িয়ে দিতে পারে। তবে সাবেক ভিপি ও নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, সত্তর ও আশির দশকে সামরিক শাসনের মধ্যেও ডাকসু নির্বাচন হয়েছে, কিন্তু কখনো ক্যাম্পাসে সেনা মোতায়েনের ঘটনা ঘটেনি। এমনকি পুলিশের উপস্থিতিও সীমিত রাখা হতো। এখন কেন এমন সিদ্ধান্ত। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, প্রচারণা শুরু হওয়ার পর থেকেই এসব ঘটনা শিক্ষার্থীদের মধ্যে শঙ্কা সৃষ্টি করছে। এসব ঘটনার সূত্র ধরে অনেক রাজনৈতিক দল ডাকসু নির্বাচন বিলম্বিত করার চেষ্টা করতে পারে। তবে মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. মেহেদী হাসান বলেন, এসব ঘটনা ডাকসু নির্বাচন বানচাল করতে পারবে না। যদিও শিক্ষার্থীদের মধ্যে শঙ্কা তৈরি হচ্ছে। যেই গোষ্ঠীগুলো ডাকসু নির্বাচন চায় না, তারা হয়তো এসব ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভিসি-প্রক্টরের পদত্যাগ চাইবে। তিনি বলেন, ক্যাম্পাসের ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দলগুলোর বর্তমান অবস্থা দেখলেই বোঝা যায়, তারা চায় ডাকসু নির্বাচন দ্রুত সম্পন্ন হোক। কোনো পক্ষের যদি নির্বাচন বানচালের অসৎ উদ্দেশ্য থাকে, তবে সংগঠনগুলো তা রুখে দেবে বলে আমি মনে করি।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স